শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্মৃতি বিজড়িত বরিশাল শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের জমি দখলমুক্ত হোক скачать в хорошем качестве

শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্মৃতি বিজড়িত বরিশাল শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের জমি দখলমুক্ত হোক

'বেডার কাণ্ড দেহো। ওরে আবাইগ্যা, গাছডার গায়েতো লেইখা রাখছোস- 'ঝিলু দি গ্রেট'। গান গাইয়া কি আর গ্রেট হইতে পারবি?' বাবার বড় শখ হলো ছেলে বড় হয়ে ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার হবে। সেজন্য একদিন বলেছিলেন, পুত্রের উত্তর ছিল - 'দেখ একদিন ঠিকই আমি 'ঝিলু দি গ্রেট' হবো।' 'ঝিলু দি গ্রেট' পঞ্চাশের দশকে কণ্ঠের গান আর প্রিয়সঙ্গী বেহালাকে সম্বল করে বরিশাল থেকে তত্‍কালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় এলেন, জড়িত হয়ে গেলেন নানাবিধ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে, এরই মধ্যে শুরু হল ভাষার অধিকার আদায়ের লড়াই৷এ লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হলো ঢাকার রাজপথ ৷ এর প্রতিক্রিয়ায় আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখলেন অসামান্য কবিতা - 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি'। আর ওই কবিতায় সুর বসালেন আলতাফ মাহমুদ এবং এদেশের কোটি জনতা একবাক্যে স্বীকার করলেন, বরিশালের সেই ঝিলু, 'আল তাফ মাহমুদ রিয়েলি দি গ্রেট'। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ গণসঙ্গীত শিল্পী আবদুল লতিফ বলেছিলেন , 'আলতাফ মাহমুদের কণ্ঠ ছিল অদ্ভুত সুন্দর। যত না সুরকার হিসেবে নাম, তার চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর কণ্ঠ শিল্পী হিসেবে। আমার ওই গানটি... 'ওরা আমার মুখের কথা কাইড়া নিতে চায়/কথায় কথায় তারা আমায় হাতকড়া লাগায়', আলতাফের মতো করে আর কেউ গাইতে পারেনি কোনোদিন, এমনকি আমি নিজেও না''।লেখক, সাংবাদিক,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রবীন্দ্র সংগীতে বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হক -''ইতিহাসে শিল্পী ছিল কেনা গোলাম, অন্ত্যজ। বর্তমানে সে ভাড়াটে হিজড়ে। পয়সা ছড়ালেই তাকে পাওয়া যায়। অতীতে শিল্পী বাইরের দাসত্বকে অন্তরে মোচন করত। তার শিল্প গড়ার ভেতর দিয়েই, বিপ্লব জন্ম দিতে দিতে। আলতাফ মাহমুদকে মনের মধ্যে ধ্যান করার চেষ্টায় অত কথা মনে পড়ে। সমাজমুক্তি ও শিল্পমুক্তি কে একযোগে সর্বৈবনিবেদিত এমন প্রান এ কালে এ দেশে বিরল'। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় বরিশালে আলতাফ মাহমুদ রাজপথে দাঙ্গাবিরোধী গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন, পরবর্তিতে ঢাকায় গণসঙ্গীত, ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠক, পরে জীবিকার তাগিদে করাচিতে চলচিত্র নির্দেশনায় সঙ্গীত পরিচালনা, সবশেষে আবার ফেরা দেশের মাটিতে, অনেক অনেক ইতিহাস যা দেশের মানুষের জানা প্রয়োজন, এত ছোট পরিসরে তাকে আবদ্ধ করা সম্ভব না। ২৫ মার্চেও গণহত্যাযজ্ঞ শুরুর পর থেকে আলতাফ মাহমুদ বিমর্ষ বিক্ষুদ্ধ ও বেদনা হত হয়ে পড়েন। প্রাথমিক প্রতিরোধ চূর্ন হয়ে গেলে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় রাজনৈতিক সামরিক নেতৃবৃন্দ ও সেইসঙ্গে হাজার হাজার সন্ত্রস্ত মানুষ, যাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিবারের সদস্যরা নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে।অবরুদ্ধ দেশে আটকা পড়েছিল যে অগণিত মানুষ, আলতাফ মাহ মুদও ছিলেন তাদের একজন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, অপা রেশনে অংশ নেয়া, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্যে গান এ সুর দেয়া, সব ই করতেন তিনি, যারা তাকে চিনতেন স্মৃতিচারণে বলেছেন যে বোঝা যাচ্ছিল তিনি বিপদে পড়বেন, আজ অথবা কাল।ট্রেনিং নিয়ে আসা গেরিলাদের পরিচালনার প্রস্তুতি চালানোর পর বাকি অস্ত্র লুকিয়ে রাখার দায় কেউ নিতে রাজি না হওয়াতে স্বেচ্ছায় নিজের কাধে তুলে নিয়ে ছিলেন সুরকার আলতাফ মাহমুদ। বাড়ির পেছনের কাঁঠাল গাছের নিচে মাটি খুড়ে চাপা দিয়ে রাখলেন অস্ত্রবোঝাই ট্রাংক। যোদ্ধা দলের একজন সন্দেহবশত ধরা পড়েছিলেন পাকবাহিনীর হাতে, ৩০ আগস্ট গভীর রাতে ট্রাক বোঝাই সৈন্য দল এসে ঘেরাও করে আলতাফ মাহমুদের বাসা''। 'একজন মেজর অথবা ক্যাপ্টেন মার্কা অফিসার হুংকার দিয়ে বলল, আলতাফ মাহমুদ কোন হ্যায়? সেই অফিসারের সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে বললেন, আমি আলতাফ মাহমুদ। ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডার সামাদকে দাঁড় করিয়ে জিগ্যেস করলো, ইয়ে আদমি আলতাফ মাহমুদ? সামাদ সাহেব মাথা নেড়ে জবাব দিল, জি হুজুর। এবর মেজর আবার জিজ্ঞাসা করল, হাতিয়ার ইয়ে আদমিকা পাস রাখা? সামাদ সাহেব মেজরকে মাথা নেড়ে বললেন, জি হ্যাঁ। উসকা পাস হাতিয়ার রাখা। ’কাঁঠালগাছের নিচ থেকে লুকানো অস্ত্রের ট্রাঙ্কাগুলো বের হলে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত আলতাফ মাহমুদকে দিয়ে তা টেনে তোলানো হয়। তারপর তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আর্মিদের নির্যাতন কক্ষে যেখানে সর্বোচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা ছাড়াও বিহারি রিফি উজি দিয়ে টর্চার করা হতো'। জানা যায় আলতাফ মাহমুদের শাশুড়ি,৮৬ সালের ২৪ অক্টোবর মারা যান । বনানী গোর স্থানে দাফন সেরে যখন শোকার্ত সকলে বাড়ি ফেরেন, তখন ১৮ বছরের শাওন চিৎকার করে বলেছিলেন , ‘তোমার মার একটা কবর আছে, জায়গা আছে – আমার বাবার কবর কোথায়?’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে কন্যা শাওন মাহমুদের বাবার মত অনেকের বাবা, অনেকের মায়ের অনেকের ছেলে মেয়ের কোনো কবর হয়নি , কোনো শেষকৃত্য হয়নি, তাদের কোনো খোজ মেলেনি - !