Gangani: The Grand Canyon of Bengal | সপ্তাহান্তে গনগনি ভ্রমণ | One Day Tour скачать в хорошем качестве

Gangani: The Grand Canyon of Bengal | সপ্তাহান্তে গনগনি ভ্রমণ | One Day Tour

সপ্তাহান্তে ছুটি কাটানোর জন্য গনগনি ভ্রমণ পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতা: আপনি যদি সপ্তাহান্তে প্রকৃতির মাঝে একটু ঘুরতে চান, তাহলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা শহরের কাছে অবস্থিত গনগনি হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ স্থান। কলকাতা থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে এবং মেদিনীপুর শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে এই স্থানের অবস্থান। গনগনি তার অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য "বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন" নামে পরিচিত। শিলাবতী নদীর তীরে অবস্থিত এই স্থান স্থানীয়ভাবে "গনগনি ডাঙ্গা" বা "গনগনি খোলা" নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে পাহাড় ও সমুদ্রের বাইরেও এটি দেখার মতো একটি ব্যতিক্রমী স্থান, যা এর লাল ল্যাটেরাইট মাটির গিরিখাতের জন্য বিখ্যাত। বছরের পর বছর ধরে শিলাবতী নদীর জলের ক্ষয়প্রবণতা এবং বাতাসের প্রভাবে সৃষ্ট ভূতাত্ত্বিক কাঠামোটি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। শীতকালে এই স্থানটি পরিযায়ী পাখিদের জন্য আকর্ষণীয় এবং বর্ষাকালে শিলাবতীর জলচিত্র এই স্থানকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে। সম্প্রতি, পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে একটি সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে, যা নদী অবধি পৌঁছায়, ফলে গিরিখাতগুলির নিকট থেকে পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। শুকনো মৌসুমে পর্যটকরা নদীও পার হতে পারেন। গনগনি রিসোর্ট: গনগনি হোম-স্টে ট্যুরিজম পিকনিক গার্ডেন: এই মনোমুগ্ধকর রিসোর্টটি শিলাবতী নদীর পাশেই গনগনি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত। রিসোর্টটি বেশ কয়েক একর জায়গা জুড়ে প্রসারিত, যেখানে সাজানো বাগান, কটেজ, রেস্তোরাঁ, ওয়াচ টাওয়ার এবং পিকনিক স্পট রয়েছে। এখানে শিলাবতী, কংসাবতী, সুবর্ণরেখা এবং দুলুং নামের চারটি চমৎকার কটেজ রয়েছে, যা বিভিন্ন নদীর নামে নামকরণ করা হয়েছে। কটেজগুলি উঁচু ছাদ এবং স্কাইলাইট সহ তৈরি, যা প্রশস্ত ও আরামদায়ক। প্রতিটি কটেজে একটি বারান্দা রয়েছে, যেখানে বসে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এছাড়া এখানে ১০ শয্যার একটি নন-এসি ডরমেটরিও রয়েছে। রিসোর্টে নবনির্মিত রেস্তোরাঁয় বাঙালি, চাইনিজ এবং তন্দুরি সহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়, যার দাম সাশ্রয়ী এবং গুণগত মানে উৎকৃষ্ট। নদীর তীরবর্তী অবস্থানের কারণে কক্ষ থেকেই শিলাবতীর অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। এই জায়গাটি পূর্বে গনগনি পিকনিক স্পট নামে পরিচিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি থাকার জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত। গনগনি রিসোর্টের হোম-স্টে ট্যুরিজম পিকনিক গার্ডেন প্রাঙ্গণে প্রশান্ত পরিবেশ বিরাজমান। এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, যেখান থেকে চারপাশের বিস্তৃত প্যানোরামিক দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়াও, বাগান, দোলনা, স্লিপ এবং আরামদায়ক আসনের ব্যবস্থা রয়েছে যা পর্যটকদের বিশ্রাম ও আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এখানে বকাসুরের কাহিনীর দুইটি স্মৃতিচিহ্নও রাখা আছে, যা পর্যটকদের আরও আগ্রহী করে তোলে। বকাসুরের কাহিনী: মহাভারতের মহাকাব্যে গনগনির প্রসঙ্গ পাওয়া যায়। স্থানীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই এলাকায় একসময় বকাসুর নামের এক রাক্ষসের বাস ছিল। বকাসুর প্রতিদিন গ্রামে হানা দিয়ে ভয়ঙ্কর তাণ্ডব চালাত। গ্রামবাসীদের সুরক্ষার জন্য, স্থানীয় রাজা বাধ্য হয়ে প্রতি সপ্তাহে বকাসুরের জন্য একজন মানুষকে আহারের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই সময়ে পাণ্ডবরা তাদের মা কুন্তীর সঙ্গে বনবাসে এই অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কুন্তী একটি গ্রামবাসীর বাড়িতে ছিলেন এবং একদিন দেখলেন যে ওই পরিবারের একজন সদস্যকে বকাসুরের কাছে পাঠানো হবে। কুন্তী তখন তার পুত্র ভীমকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। ভীম, যিনি একজন অদম্য যোদ্ধা ছিলেন, আনন্দের সঙ্গে রাক্ষসকে পরাস্ত করতে রওনা দেন। সেখানে গিয়ে বকাসুরের সঙ্গে ভীমের প্রবল যুদ্ধ হয় এবং শেষমেশ বীরত্বের সঙ্গে ভীম বকাসুরকে পরাজিত করে হত্যা করেন। এই যুদ্ধের প্রভাবে গনগনির ভূপ্রকৃতিতে পরিবর্তন আসে এবং এলাকাটির বিশেষ গিরিখাতগুলি সৃষ্টি হয় বলে অনেকের ধারণা। এই কাহিনী কতটা সত্য তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, মহাভারতে বলা হয়েছে যে পাণ্ডবরা একচক্রপুর নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন, যা বর্তমানে রামপুরহাটের কাছাকাছি একটি স্থান (একচক্র নামে পরিচিত)। তবে, একচক্রের কাছে কোনো পাহাড় নেই এবং গনগনির দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ফলে এটি মূলত একটি লোককাহিনী হিসেবে প্রচলিত। তবে, যখন আপনি গনগনির গিরিখাতগুলির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাবেন, তখন কল্পনা করতে পারেন কিভাবে ভীম এবং বকাসুরের যুদ্ধ হয়েছিল এবং এই প্রাকৃতিক দৃশ্যপট কীভাবে তৈরি হয়েছিল। এই কল্পনা নিঃসন্দেহে আপনাকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেবে। পিকনিক ও গাড়ি পার্কিং খরচ: এখানে পিকনিক করতে এবং গাড়ি পার্কিং করতে কত খরচ রয়েছে তা ভিডিওতে দেওয়া আছে। সিনেমার শুটিং এবং বিবাহের শুটিং এখানে করা যায়। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করা যায়।। গনগনি পৌঁছানোর উপায়: ট্রেনে: সবচেয়ে ভালো বিকল্প হল রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস যা সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে সকাল ৬.২৫ টায় ছেড়ে যায়। সকাল ৯.৩০ নাগাদ গড়বেতা স্টেশনে পৌঁছায়। গড়বেতা থেকে রিকশা বা ভ্যান ভাড়া করে গনগনি যেতে পারেন। এছাড়া, সকাল ৭.৪৫ টায় শালিমার স্টেশন থেকে আরণ্যক এক্সপ্রেসেও ১০.৫০ মিনিটে গড়বেতা পৌঁছানো যায়। গড়বেতা স্টেশন থেকে রিকশা বা ভ্যানে করে সহজেই গনগনি যাওয়া যায়। গাড়িতে: আপনি যদি কলকাতা থেকে গাড়িতে ভ্রমণ করেন, তাহলে মুম্বাই রোড (NH6) দিয়ে খড়্গপুর এবং মেদিনীপুর টাউনের সংযোগস্থল দিয়ে NH60 ধরে মেদিনীপুর, সালবনি এবং চন্দ্রকোনা পেরিয়ে অবশেষে গড়বেতায় পৌঁছাতে হবে। গড়বেতা থেকে আপনাকে শহরের মধ্য দিয়ে বাঁদিকে যেতে হবে গনগনির দিকে। দূরত্ব প্রায় 160 কিমি। আরও একটি রুট আছে, যা আরামবাগ এবং কামারপুকুর রোড হয়ে বিষ্ণুপুরের কাছে NH60-এর সাথে সংযুক্ত। বাসে: চন্দ্রকোনা রোড বা চন্দ্রকোনা টাউনের বাসে এসে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে গনগনি যেতে পারেন। আপনি যদি ইতিমধ্যেই গনগনি ভ্রমণ করে থাকেন, তাহলে নীচে মন্তব্য করে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে ভাগ করে নিন। যদি এখনও ভ্রমণ না করে থাকেন, তাহলে শীঘ্রই পরিকল্পনা করুন।