১৮২৫ সালের রুপলাল হাউজ। প্রথম মালিক ছিলেন আর্মেনীয় জমিদার Stephen Aratoon.তখন নাম ছিল Aratoon House скачать в хорошем качестве

১৮২৫ সালের রুপলাল হাউজ। প্রথম মালিক ছিলেন আর্মেনীয় জমিদার Stephen Aratoon.তখন নাম ছিল Aratoon House

পুরান ঢাকার সদর ঘাট এলাকায় রুপলাল হাউজের ইতিহাস। রূপলাল হাউজ নির্মিত হয় ১৮২৫ সালে। যেটি তৈরি করেছিলেন আর্মেনীয় ব্যবসায়ী Stephen Aratoon। তখন এটি ‘Aratoon House’ নামে পরিচিত ছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮৩৫ সালের দিকে, দুই ধনাঢ্য বণিক Ruplal Das ও তাঁর ভাই Raghunath Das ওই বাড়িটি কিনে নেন। দুই ভাই ঢাকায় লগ্নি ব্যবসা করতেন। অনেক কষ্ট করে তারা অনেক সম্পদের মালিক হন এবং এই রুপলাল হাউজটি কিনে নেন। ডিজাইন আরো উন্নত করার জন্য তারা এটি পুনঃনির্মাণ শুরু করেন এবং পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় কলকাতার বিশিষ্ট স্থাপত্য সংস্থা Martin Company-কে । এই বাড়িতে আভিজাত্যপূর্ণ বলরুম ছিল। বুড়িগঙ্গা নদীমুখী‌ একটি সুন্দর বেলকনি ছিলো। বাড়িটিতে প্রায় ৫০টির মতো কক্ষ। এর শিল্পীত বারান্দা, ভেন্টিলেটেড জানালা–দরজা, বাগান ও নদীতীর মিলে বাড়িটিকে “কলোনিয়াল-ভবন” হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। জানা যায় সেই সময় বিদেশি ও স্থানীয় অভিজাত শ্রেণি, বণিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই বাড়িতে আসতেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁও নাকি এই বাড়িতে এসে থাকতেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে, দাস পরিবার বাড়িটি বিক্রি করে দিয়ে কলকাতায় চলে যান। এর ফলে রূপলাল হাউজের স্বর্ণযুগ শেষ হয়। এর মালিকানা নিয়ে দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে এখনো। এখন এখানে সেনাবাহিনীর কিছু পরিবার থাকেন। রূপলাল হাউজ এখন প্রায় মৃত। হারিয়ে যাচ্ছে তার গৌরব। অনেক অংশ দখল হয়ে গেছে। নিচের তলায় গুদাম, মসলার দোকানে ভরপুর। তবে রুপলাল হাউজটির গঠন কাঠামো মজবুত। অনেকগুলো ভূমিকম্প হয়ে গেল রূপলাল হাউজের ক্ষতি হয়নি। সবশেষে ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে পুরান ঢাকার অনেক বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রুপলাল হাউজটি এখনো টিকে আছে। অব্যবস্থাপনার জন্য এই ঐতিহাসিক ভবনের অনেক অংশ জরাজীর্ণ, দেয়াল ভেঙে যাচ্ছে, খুঁটির অবনতি, ছাদ ও বোর্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রূপলাল হাউজ আমাদের পুরনো ঢাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি অমূল্য সম্পদ। ইউরোপীয় রেনেসাঁ-পন্থার স্থাপত্য, কলোনিয়াল ডিজাইন, এবং স্থানীয় উপকরণের মেলবন্ধন এই রূপলাল হাউজ ধুলোর স্তূপে হারিয়ে যাচ্ছে। রূপলাল হাউজ এখন এক “সংকটমূলক হেরিটেজ” যদি আমরা সময়মতো পদক্ষেপ না নিই, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু পুরনো গল্পই শুনবে, দেখা পাবে না। ০৭.১১.২০২৫/বিকেল/শুক্রবার